ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি হলো যাকাত। প্রতিবছরই যাকাত দিতে মুমিন মুসলমানরা সচেষ্ট থাকেন। গরিব দুঃখীকে দান করে আল্লাহর কাছে প্রিয় হবার জন্য চেষ্টা করেন।

যাকাত কী এবং কেন?
যাকাত শব্দের অর্থ পরিচ্ছন্নতা। নিজের আয় থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ কম সৌভাগ্যবান মানুষকে দান করে নিজের আত্মার পরিশুদ্ধিই যাকাত। শরীয়তের ভাষ্যে, বাৎসরিক আয়ের ২.৫% অংশ আল্লাহের পথে দান করে দেয়ার নাম যাকাত। এতে সম্পদ হয় হালাল এবং আত্মা হয় পরিশুদ্ধ। রাসূল (স) এর মতে, “যে ব্যক্তি যাকাত দিল তার থেকে যেন শয়তান নির্মূল হয়ে গেল।”

কারা দেবেন যাকাত?
যাকাত দেয়ার জন্যে একজন মুসলিমের ‘সাহিবে নিসাব’ হতে হবে অর্থাৎ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে। নিসাব বলতে বোঝায় ন্যূনতম যে পরিমাণ ধন-সম্পদ থাকলে যাকাত আদায় করা ফরজ। ফিকহ অনুসারে নিসাব পরিমাপ করা হয়ে থাকে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের হিসাব অনুসারে, এই পরিমাণ হচ্ছে ৭.৫ তোলা স্বর্ণ কিংবা ৫২.৫ তোলা রৌপ্য অথবা সমপরিমাণ অর্থ।
যে ব্যক্তি এক বছর যাবত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকেন, তাকে মোট অর্থের শতকরা ২.৫% হারে যাকাত পরিশোধ করতে হবে। অধিক সওয়াবের আশায় বেশিরভাগ মুসলমানই যাকাত দেবার জন্যে পবিত্র রমজান মাসকে বেছে নেন।

কারা পাবেন যাকাত?
যাকাতের যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে শরিয়তে বিশেষ বিধান রয়েছে। মূলত, গরীব দুঃখী, নিঃস্ব বা দেনায় জর্জরিত মুসলিম কিংবা অসহায় মুসাফির যাকাত পাবার যোগ্য। যারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যাকাত সংগ্রহ করে সত্যিকার দুঃখী মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়, তাদের কাছেও যাকাতের অর্থমূল্য দেয়া চলে। কেবলমাত্র যোগ্য ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে যাকাত দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
শরীয়ত মোতাবেক যারা যাকাত পাবার যোগ্য, তারা হলেন –
১। ফকির (যার নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই)
২। মিসকিন বা নিঃস্ব ব্যক্তি (যার কাছে একবেলা খাবারও নেই)
৩। ঋণগ্রস্ত মুসলিম
৪। অসহায় মুসাফির
৫। যাকাত উত্তোলন, সংরক্ষণ ও বন্টনের কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ
৬। ইসলাম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক অমুসলিম
৭। নতুন মুসলিম যার ঈমান এখনও পরিপক্ক হয়নি
৮। ক্রীতদাস/বন্দী মুক্তি
লক্ষ্য রাখতে হবে, ফকির বা মিসকিন যেন মুসলমান হয় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হয়। 

কেন দেবেন যাকাত?
যাকাত বান্দাকে স্রষ্টার নিকটে আসতে সহায়তা করে। ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুকন বা স্তম্ভ হিসেবে যাকাত অত্যন্ত জরুরী। শুধুমাত্র স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভই নয়, একে অপরের প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি ও সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ গঠনে অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করে যাকাত।
যাকাত দিয়ে আপনি বাঁচাতে পারেন কারো জীবন, ফোটাতে পারেন তার প্রিয়জনের মুখে হাসি। হতে পারেন কারো বিপদের বন্ধু। একইসাথে লাভ করতে পারেন স্রষ্টার সান্নিধ্য। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় যেটি – যাকাত আপনাকে এনে দেবে এক অসাধারণ তৃপ্তি। একজন মানবতাবাদী হিসেবে আরেকজন অসহায় মানুষের দুঃসময়ের বন্ধু হয়ে নিজের কাছে নিজে যে প্রশান্তি পাবেন – তার কোন বিকল্প আছে কি?