হিংস্র পশুপাখির ক্রয়-বিক্রয়
যেসব প্রাণীর মাঝে কোনো ধরনের উপকার নেই; তার বিক্রি বৈধ নয়। যেমন পাঁচ ধরনের দুষ্ট প্রাণী। অনুরূপ বয়স ইত্যাদি হওয়ার ফলে যা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে না বলে অনুমেয় হয়। চিতাবাঘ দিয়ে শিকারের উপকার নেওয়া যায়, হাতি দ্বারা লড়াই করা যায়, বানর দিয়ে পাহারাদারীর কাজ হয়, পালিত বিড়াল দিয়ে ইঁদুর তাড়ানো যায়, বুলবুলির ধ্বনি ভালো লাগার কাজ দেয়, ময়ূরের পেখম দ্বারা মানসিক শান্তি লাভ হয়। (তুহফাতুল মুহতার, খ. ৪, পৃ. ২৩৮)
ফোকাহায়ে কেরামের সবগুলো মাজহাব এ ব্যাপারে একমত যে, হিংস্র চতুষ্পদ প্রাণী ও হিংস্র পক্ষীকুলের বিক্রি জায়েজ নয়, যদি সেগুলো দ্বারা কোনো অবস্থাতেই উপকার গ্রহণ সম্ভব না হয়। পক্ষান্তরে সেগুলো দ্বারা যদি কোনোভাবে উপকার গ্রহণ করা যায়, তাহলে শূকর ছাড়া অন্যান্য প্রাণীর বিক্রি জায়েজ। কারণ শূকর হলো আপাদমস্তক অপবিত্র। ফলে এর দ্বারা কোনো ধরনের উপকার নেওয়া যায় না; তার বিক্রিও বৈধ নয়। (আদ-দুররুল মুখতার, খ. ৪, পৃ. ২১৪; দারদির আশ-শারহুল কাবির, খ. ৩, পৃ. ১১; তুহফাতুল মুহতাজ, খ. ৪, পৃ. ২৩৮; আশ-শারহুল কাবির, পাদটীকা আল মুগনি, খ. ৪, পৃ. ১৩)।
তবে হিংস্র প্রাণী থেকে উপকার গ্রহণ, যা বিক্রিকে অনুমোদন করে তার ব্যাখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে।
হানাফি মাজহাবের জাহেরি রেওয়ায়ায়ে ও মালিকি মাজহাবের অগ্রাধিকারমূলক মাজহাব অনুযায়ী সাধারণভাবে যে কোনো ধরনের উপকারই যথেষ্ট। তার চামড়ার মাধ্যমে হলেও চলবে। প্রাণীটি প্রশিক্ষিত হোক আর না হোক। এ ব্যাপারে হানাফিদের দলিলের আলোকে দংশনকারী কুকুর বিক্রিও বৈধ। চিতাবাঘ, হাতি, বানর ও অন্যান্য সব ধরনের হিংস্র প্রাণী, এমনকি বিড়ালের বিক্রিও বৈধ। অনুরূপ হিংস্র পক্ষীকুলও; চাই তা প্রশিক্ষিত হোক আর না হোক। এগুলোর বিক্রি বৈধতার কারণ হলো, তা দিয়ে উপকৃত হওয়া যায়, চামড়াও কাজে লাগানো যায়। শুধু শূকর হলো এর ব্যতিক্রম। (আদ-দুররুল মুখতার, খ. ৪, পৃ. ২১৪; বাদাই সানাই, খ. ৫, পৃ. ১৪২)।
আল্লামা জায়লাঈ উপকৃত হওয়ার সঙ্গে এ-ও বলেছেন, এগুলো স্বাভাবিকভাবে প্রশিক্ষণও গ্রহণ করে। অতঃপর তিনি আরও বলেন, শরিয়তসম্মতভাবে যা থেকে বর্তমানে বা পরিণতিতে উপকৃত হওয়া এবং তা মূল্যমান হয়, তাহলে তার বিক্রি জায়েজ, অন্যথায় নয়। (তাবয়িনুল হাকাইক, খ. ৪, পৃ. ১২৬)।
আল-বাবরতি বলেন, উপকৃত হওয়াই যখন এ ব্যাপারে মুখ্য হিসেবে প্রমাণিত হয়, তখন চিতাবাঘ, বাঘ ও নেকড়ের ব্যাপারে তা প্রমাণিত হয়। পক্ষান্তরে কষ্টদায়ক প্রাণী যেমনÑ সাপ, বিচ্ছু ও ভুলতার ব্যাপারে কোনো উপকার প্রমাণিত হয় না। (আল-ইনারা, শারহুল হিদায়া, খ. ৬, পৃ. ২৪৭; ফাতহুল কাদির, খ. ৬, পৃ. ২৪৫)।
অনুরূপ ভূমির অকষ্টদায়ক প্রাণী যেমনÑ সিংহ, ইঁদুর, পিঁপড়া, কাকলাশ, সজারু ও গুঁইসাপ অথবা সামুদ্রিক প্রাণী যেমনÑ ব্যাঙ ও কাঁকড়া উপকারহীন প্রাণী।
মালিকি মাজহাবে বিড়াল ও হিংস্র প্রাণীর বিক্রি চামড়ার কারণে জায়েজ। শুধু মাংসের জন্য অথবা মাংস ও চামড়ার জন্য মাকরুহ। (দারদির, আশ-শারহুল কাবির ও হাশিয়া দাসূকি, খ. ৩, পৃ. ১০)। এ অভিমতের ভিত্তি হলো হিংস্র প্রাণীর মাংস সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি।
পাঞ্জাবিশিষ্ট হিংস্র পাখিগুলোর গোশত মালিকি মাজহাবে বৈধ। যেমনÑ বাজ, ঈগল ও শকুন। তবে চামচিকা তাদের মতে মাকরুহ। হিংস্র চতুষ্পদ প্রাণী সম্পর্কে তাদের অভিমত তিন ধরনের।
এক. মাকরুহ, দুই. নিষিদ্ধ, তিন. মানুষের ওপর আক্রমণকারী প্রাণী এবং আক্রমণে উদ্যত হয় না, এমন প্রাণীর মাঝে পার্থক্যকরণ। আক্রমণকারী প্রাণী যেমনÑ বাঘ, চিতা ও নেকড়ে ধরনের প্রাণী হারাম। আক্রমণকারী নয়, এমন প্রাণী যেমনÑ ভল্লুক, শিয়াল, হায়েনা ও সাধারণ বিড়াল হলো তাদের মাজহাবে মাকরুহ।
শাফেয়ি মাজহাবের ফোকাহায়ে কেরাম প্রাণীর উপকার বলতে বুঝিয়েছেন, তা দিয়ে শিকার করা, পাহারাদারী করা। যদিও তা পরবর্তীকালে সম্ভব হয়। যেমন আশা করা যায় প্রাণীটি পরবর্তী সময়ে এরূপ কাজে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে।
যেসব প্রাণীর মাঝে কোনো ধরনের উপকার নেই; তার বিক্রি বৈধ নয়। যেমন পাঁচ ধরনের দুষ্ট প্রাণী। অনুরূপ বয়স ইত্যাদি হওয়ার ফলে যা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে না বলে অনুমেয় হয়। চিতাবাঘ দিয়ে শিকারের উপকার নেওয়া যায়, হাতি দ্বারা লড়াই করা যায়, বানর দিয়ে পাহারাদারীর কাজ হয়, পালিত বিড়াল দিয়ে ইঁদুর তাড়ানো যায়, বুলবুলির ধ্বনি ভালো লাগার কাজ দেয়, ময়ূরের পেখম দ্বারা মানসিক শান্তি লাভ হয়। (তুহফাতুল মুহতার, খ. ৪, পৃ. ২৩৮; শারহুল মানহাজ ওহাশিয়াতুল জামাল, খ. ৩, পৃ. ২৫)।
শায়খ উমায়রা বলেন, কীটপতঙ্গের বিক্রি বৈধ নয়। অনুরূপ অনুপকারী হিংস্র প্রাণীর বিক্রিও বৈধ নয়। উপকারহীনতা বলতে বোঝানো হয়েছেÑ যা খাওয়া যায় না, যা দিয়ে আক্রমণ হানা যায় না, যার ওপর সত্তয়ার হয়ে লড়াই করা যায় না, যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে না, যা সত্তয়ার হওয়ার উপযোগী নয়। উপকারহীনতা কোনো সময় হয় অনুভূতিমূলক, আর কোনো সময় হয় শরিয়তের আলোকে।
যা দিয়ে উপকার নেওয়া যায় না, তা মাল হয় না। ফলে এর বিপরীতে মাল গ্রহণ করা বাতিল পন্থায় মাল ভক্ষণের নামান্তর। রাফিঈ এরূপ ব্যক্ত করেছেন। (হাশিয়া উমায়রা আলা শারহিল মাহাল্লি, পাদটীকা কালয়ূবি, খ. ২, পৃ. ১৫৮)।
হাম্বলি ফোকাহায়ে কেরাম এ ব্যাপারে হানাফি মাজহাবের ইমাম আবু ইউসুফের অনুকরণে বলেন, যেই প্রাণী শিকার উপযোগী নয় এবং যে বর্তমানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে না তার বিক্রি সহিহ নয়।
হাম্বলিরা শিকার অনুপযোগী প্রাণীর তালিকায় উল্লেখ করেন নিম্নোক্ত প্রাণীগুলো নাম। তাহলে সিংহ, নেকড়ে ম্যাগপাই, সাধারণ কাক ও তার ডিম। কারণ এগুলোতে কোনো উপকার নেই। ফলে এগুলোর বিনিময়ে মূল্য গ্রহণ বাতিল পন্থায় মাল খাওয়ার পর্যায়ের। এগুলোতে কোনো বৈধ উপকার নেই। তা কীটপতঙ্গের পর্যায়ভুক্ত। ফলে তা শূকরের বিধানের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
শিকার উপযোগী প্রাণী যেমনÑ চিতাবাঘ, বাজপাখি, তা প্রশিক্ষিত হোক আর প্রশিক্ষণ গ্রহণের উপযোগী হোক। এতে বৈধ উপকারিতা রয়েছে। ফলে তার বিক্রি বৈধ। এগুলোর বাচ্চা ও ছানা বিক্রিও বৈধ। ছানা ফোটানোর জন্য এদের ডিম বিক্রিও বৈধ। বানর বিক্রি ও সংরক্ষণের নিমিত্তে জায়েজ, খেলার উদ্দেশ্যে নয়। (কাশশাফুল কিনা, খ. ৩, পৃ. ১৫৩-১৫৬; আশ-শারহুল কাবির পাদটীকা আল-মুগনি, খ. ৪, পৃ. ১৩)।
ইমাম আবু ইউসুফ থেকে বর্ণিত হানাফিদের বিশ্লেষণ হলো নিম্নরূপ : সিংহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে এবং তার দ্বারা শিকার করা গেলে তার বিক্রি জায়েজ, অন্যথায় নয়।
চিতাবাঘ ও বাজপাখি : এসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ফলে সর্বাবস্থায় এগুলো বিক্রি জায়েজ।
বাঘ : সে তার হিংস্রতার কারণে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে না। ফলে তা বিক্রি জায়েজ নয়। দংশনকারী কুকুরের বিক্রি বিশেষভাবে ইমাম আবু ইউসুফের মতে জায়েজ নয়।
বানর : ইমাম আবু হানিফা থেকে এ ব্যাপারে দুই ধরনের রেওয়ায়েত পাওয়া যায়।
প্রথম : তার চামড়া দিয়ে উপকার লাভ সম্ভব হওয়ার এর বিক্রি জায়েজ। এটি ইমাম সাহেব থেকে আল হাসান উল্লেখ করেছেন। জায়লাঈও একে সমর্থন করেছেন।
দ্বিতীয় : এ প্রাণীটি খেলাখুলার প্রাণী হওয়ায় বিক্রি জায়েজ নয়। খেলাধুলা নিষিদ্ধ কাজ; ফলে এর বিক্রি গণ্য হয় হারাম কাজের জন্য, হারাম জিনিসের বিক্রি রূপে। এটি বৈধ হয় না, আল-কাসানি এতে সমর্থন করেছেন। কিন্তু ইবনে আবিদিন এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন যে, যদি উদ্দেশ্য খেলাখুলা না হয়, তাহলে বিক্রি বৈধ; কিন্তু খেলা উদ্দেশ্য হলে মাকরুহ হওয়ার দাবি রাখে, অবৈধ হওয়া নয়। আল হাসকাফি এ কথাই বলেছেন। (বাদাই সানাই, খ. ৫, পৃৃ. ১৪৪; আল কাওয়ানিনুল ফিকহিয়া, ১৬৪; শারহুল মাহাল্লি ও হাশিয়া কালয়ূবি, খ. ২, পৃ. ১৫৮; কাশশাফুল কিনা, খ. ৩, পৃ. ১৫৫)।
তবে হিংস্র প্রাণী থেকে উপকার গ্রহণ, যা বিক্রিকে অনুমোদন করে তার ব্যাখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে।
হানাফি মাজহাবের জাহেরি রেওয়ায়ায়ে ও মালিকি মাজহাবের অগ্রাধিকারমূলক মাজহাব অনুযায়ী সাধারণভাবে যে কোনো ধরনের উপকারই যথেষ্ট। তার চামড়ার মাধ্যমে হলেও চলবে। প্রাণীটি প্রশিক্ষিত হোক আর না হোক। এ ব্যাপারে হানাফিদের দলিলের আলোকে দংশনকারী কুকুর বিক্রিও বৈধ। চিতাবাঘ, হাতি, বানর ও অন্যান্য সব ধরনের হিংস্র প্রাণী, এমনকি বিড়ালের বিক্রিও বৈধ। অনুরূপ হিংস্র পক্ষীকুলও; চাই তা প্রশিক্ষিত হোক আর না হোক। এগুলোর বিক্রি বৈধতার কারণ হলো, তা দিয়ে উপকৃত হওয়া যায়, চামড়াও কাজে লাগানো যায়। শুধু শূকর হলো এর ব্যতিক্রম। (আদ-দুররুল মুখতার, খ. ৪, পৃ. ২১৪; বাদাই সানাই, খ. ৫, পৃ. ১৪২)।
আল্লামা জায়লাঈ উপকৃত হওয়ার সঙ্গে এ-ও বলেছেন, এগুলো স্বাভাবিকভাবে প্রশিক্ষণও গ্রহণ করে। অতঃপর তিনি আরও বলেন, শরিয়তসম্মতভাবে যা থেকে বর্তমানে বা পরিণতিতে উপকৃত হওয়া এবং তা মূল্যমান হয়, তাহলে তার বিক্রি জায়েজ, অন্যথায় নয়। (তাবয়িনুল হাকাইক, খ. ৪, পৃ. ১২৬)।
আল-বাবরতি বলেন, উপকৃত হওয়াই যখন এ ব্যাপারে মুখ্য হিসেবে প্রমাণিত হয়, তখন চিতাবাঘ, বাঘ ও নেকড়ের ব্যাপারে তা প্রমাণিত হয়। পক্ষান্তরে কষ্টদায়ক প্রাণী যেমনÑ সাপ, বিচ্ছু ও ভুলতার ব্যাপারে কোনো উপকার প্রমাণিত হয় না। (আল-ইনারা, শারহুল হিদায়া, খ. ৬, পৃ. ২৪৭; ফাতহুল কাদির, খ. ৬, পৃ. ২৪৫)।
অনুরূপ ভূমির অকষ্টদায়ক প্রাণী যেমনÑ সিংহ, ইঁদুর, পিঁপড়া, কাকলাশ, সজারু ও গুঁইসাপ অথবা সামুদ্রিক প্রাণী যেমনÑ ব্যাঙ ও কাঁকড়া উপকারহীন প্রাণী।
মালিকি মাজহাবে বিড়াল ও হিংস্র প্রাণীর বিক্রি চামড়ার কারণে জায়েজ। শুধু মাংসের জন্য অথবা মাংস ও চামড়ার জন্য মাকরুহ। (দারদির, আশ-শারহুল কাবির ও হাশিয়া দাসূকি, খ. ৩, পৃ. ১০)। এ অভিমতের ভিত্তি হলো হিংস্র প্রাণীর মাংস সম্পর্কে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি।
পাঞ্জাবিশিষ্ট হিংস্র পাখিগুলোর গোশত মালিকি মাজহাবে বৈধ। যেমনÑ বাজ, ঈগল ও শকুন। তবে চামচিকা তাদের মতে মাকরুহ। হিংস্র চতুষ্পদ প্রাণী সম্পর্কে তাদের অভিমত তিন ধরনের।
এক. মাকরুহ, দুই. নিষিদ্ধ, তিন. মানুষের ওপর আক্রমণকারী প্রাণী এবং আক্রমণে উদ্যত হয় না, এমন প্রাণীর মাঝে পার্থক্যকরণ। আক্রমণকারী প্রাণী যেমনÑ বাঘ, চিতা ও নেকড়ে ধরনের প্রাণী হারাম। আক্রমণকারী নয়, এমন প্রাণী যেমনÑ ভল্লুক, শিয়াল, হায়েনা ও সাধারণ বিড়াল হলো তাদের মাজহাবে মাকরুহ।
শাফেয়ি মাজহাবের ফোকাহায়ে কেরাম প্রাণীর উপকার বলতে বুঝিয়েছেন, তা দিয়ে শিকার করা, পাহারাদারী করা। যদিও তা পরবর্তীকালে সম্ভব হয়। যেমন আশা করা যায় প্রাণীটি পরবর্তী সময়ে এরূপ কাজে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে।
যেসব প্রাণীর মাঝে কোনো ধরনের উপকার নেই; তার বিক্রি বৈধ নয়। যেমন পাঁচ ধরনের দুষ্ট প্রাণী। অনুরূপ বয়স ইত্যাদি হওয়ার ফলে যা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে না বলে অনুমেয় হয়। চিতাবাঘ দিয়ে শিকারের উপকার নেওয়া যায়, হাতি দ্বারা লড়াই করা যায়, বানর দিয়ে পাহারাদারীর কাজ হয়, পালিত বিড়াল দিয়ে ইঁদুর তাড়ানো যায়, বুলবুলির ধ্বনি ভালো লাগার কাজ দেয়, ময়ূরের পেখম দ্বারা মানসিক শান্তি লাভ হয়। (তুহফাতুল মুহতার, খ. ৪, পৃ. ২৩৮; শারহুল মানহাজ ওহাশিয়াতুল জামাল, খ. ৩, পৃ. ২৫)।
শায়খ উমায়রা বলেন, কীটপতঙ্গের বিক্রি বৈধ নয়। অনুরূপ অনুপকারী হিংস্র প্রাণীর বিক্রিও বৈধ নয়। উপকারহীনতা বলতে বোঝানো হয়েছেÑ যা খাওয়া যায় না, যা দিয়ে আক্রমণ হানা যায় না, যার ওপর সত্তয়ার হয়ে লড়াই করা যায় না, যে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে না, যা সত্তয়ার হওয়ার উপযোগী নয়। উপকারহীনতা কোনো সময় হয় অনুভূতিমূলক, আর কোনো সময় হয় শরিয়তের আলোকে।
যা দিয়ে উপকার নেওয়া যায় না, তা মাল হয় না। ফলে এর বিপরীতে মাল গ্রহণ করা বাতিল পন্থায় মাল ভক্ষণের নামান্তর। রাফিঈ এরূপ ব্যক্ত করেছেন। (হাশিয়া উমায়রা আলা শারহিল মাহাল্লি, পাদটীকা কালয়ূবি, খ. ২, পৃ. ১৫৮)।
হাম্বলি ফোকাহায়ে কেরাম এ ব্যাপারে হানাফি মাজহাবের ইমাম আবু ইউসুফের অনুকরণে বলেন, যেই প্রাণী শিকার উপযোগী নয় এবং যে বর্তমানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে না তার বিক্রি সহিহ নয়।
হাম্বলিরা শিকার অনুপযোগী প্রাণীর তালিকায় উল্লেখ করেন নিম্নোক্ত প্রাণীগুলো নাম। তাহলে সিংহ, নেকড়ে ম্যাগপাই, সাধারণ কাক ও তার ডিম। কারণ এগুলোতে কোনো উপকার নেই। ফলে এগুলোর বিনিময়ে মূল্য গ্রহণ বাতিল পন্থায় মাল খাওয়ার পর্যায়ের। এগুলোতে কোনো বৈধ উপকার নেই। তা কীটপতঙ্গের পর্যায়ভুক্ত। ফলে তা শূকরের বিধানের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
শিকার উপযোগী প্রাণী যেমনÑ চিতাবাঘ, বাজপাখি, তা প্রশিক্ষিত হোক আর প্রশিক্ষণ গ্রহণের উপযোগী হোক। এতে বৈধ উপকারিতা রয়েছে। ফলে তার বিক্রি বৈধ। এগুলোর বাচ্চা ও ছানা বিক্রিও বৈধ। ছানা ফোটানোর জন্য এদের ডিম বিক্রিও বৈধ। বানর বিক্রি ও সংরক্ষণের নিমিত্তে জায়েজ, খেলার উদ্দেশ্যে নয়। (কাশশাফুল কিনা, খ. ৩, পৃ. ১৫৩-১৫৬; আশ-শারহুল কাবির পাদটীকা আল-মুগনি, খ. ৪, পৃ. ১৩)।
ইমাম আবু ইউসুফ থেকে বর্ণিত হানাফিদের বিশ্লেষণ হলো নিম্নরূপ : সিংহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে এবং তার দ্বারা শিকার করা গেলে তার বিক্রি জায়েজ, অন্যথায় নয়।
চিতাবাঘ ও বাজপাখি : এসব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ফলে সর্বাবস্থায় এগুলো বিক্রি জায়েজ।
বাঘ : সে তার হিংস্রতার কারণে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে না। ফলে তা বিক্রি জায়েজ নয়। দংশনকারী কুকুরের বিক্রি বিশেষভাবে ইমাম আবু ইউসুফের মতে জায়েজ নয়।
বানর : ইমাম আবু হানিফা থেকে এ ব্যাপারে দুই ধরনের রেওয়ায়েত পাওয়া যায়।
প্রথম : তার চামড়া দিয়ে উপকার লাভ সম্ভব হওয়ার এর বিক্রি জায়েজ। এটি ইমাম সাহেব থেকে আল হাসান উল্লেখ করেছেন। জায়লাঈও একে সমর্থন করেছেন।
দ্বিতীয় : এ প্রাণীটি খেলাখুলার প্রাণী হওয়ায় বিক্রি জায়েজ নয়। খেলাধুলা নিষিদ্ধ কাজ; ফলে এর বিক্রি গণ্য হয় হারাম কাজের জন্য, হারাম জিনিসের বিক্রি রূপে। এটি বৈধ হয় না, আল-কাসানি এতে সমর্থন করেছেন। কিন্তু ইবনে আবিদিন এরূপ ব্যাখ্যা করেছেন যে, যদি উদ্দেশ্য খেলাখুলা না হয়, তাহলে বিক্রি বৈধ; কিন্তু খেলা উদ্দেশ্য হলে মাকরুহ হওয়ার দাবি রাখে, অবৈধ হওয়া নয়। আল হাসকাফি এ কথাই বলেছেন। (বাদাই সানাই, খ. ৫, পৃৃ. ১৪৪; আল কাওয়ানিনুল ফিকহিয়া, ১৬৪; শারহুল মাহাল্লি ও হাশিয়া কালয়ূবি, খ. ২, পৃ. ১৫৮; কাশশাফুল কিনা, খ. ৩, পৃ. ১৫৫)।
No comments